
কক্সবাংলা ডটকম(৫ নভেম্বর) :: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৩৭টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। বাকি ৬৩টি আসন ফাঁকা।
প্রশ্ন হলো, এই আসনগুলো কি জোটের প্রার্থীদের জন্য খালি রাখা হলো? বিএনপির সঙ্গে কোন কোন দল জোট করছে এবং কাদেরকে কতগুলো আসন ছেড়ে দেওয়া হবে?
ফাঁকা এই ৬৩টি আসনই কি শরিকরা পাবে, নাকি প্রথম দফায় যেসব হেভিওয়েট বা গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী বাদ পড়েছেন, তাদেরও অনেকে যুক্ত হতে পারেন?
প্রার্থী মনোনয়নে বিএনপির অঙ্কটা আসলে কী? কারা কোন যুক্তিতে মনোনয়ন পেলেন আর কারাই বা বাদ পড়লেন?
গত ৩ নভেম্বর বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও বরাবরের মতো এবারও তিনটি আসন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা নির্বাচন করবেন।
ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসন থেকে তিনি দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচন করবেন বগুড়া-৬ আসনে।
বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা দেশবাসী জানে। এই অবস্থায় তিনি সশরীরে নির্বাচনি গণসংযোগ করতে পারবেন কি না সেটি যেমন প্রশ্ন, তেমনি তারেক রহমান কবে দেশে ফিরছেন, তা নিয়েও রাজনীতিতে আছে নানা সমীকরণ।
কিন্তু তারপরও এই দুজনকে চারটি আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপি কী বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করলে?
রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের যত সমালোচনা করাই হোক না কেন, বাস্তবতা হলো, খালেদা জিয়া এখনও বিএনপির ঐক্যের প্রতীক।
তার শারীরিক অবস্থা যাই থাকুক না কেন, তাকে প্রার্থী করার অর্থই হলো দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখা এবং সেইসঙ্গে অন্য দলগুলোর ওপরেও এটি একটি বাড়তি চাপ।
ম্যারাডোনা শেষদিকে খেলতে না পারলেও তার মাঠে থাকাটাই যেমন প্রতিপক্ষের জন্য বিরাট দুশ্চিন্তার কারণ হতো, খালেদা জিয়ার নির্বাচনের মাঠে থাকাও সেরকম।
অর্থাৎ শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি যদি তিনটি আসনে সশরীরে গণসংযোগ করতে নাও পারেন, যদি তিনি বিভিন্ন সমাবেশে ভার্চুয়ালিও বক্তব্য দেন, তারপরও ব্যক্তিগত ক্যারিশমা ও জনপ্রিয়তার কারণে তিনি সবগুলো আসনে জয়ী হবেন—এটি মোটামুটি নিশ্চিত। অর্থাৎ প্রার্থী মনোনয়নে এটি হচ্ছে বিএনপির প্রথম অঙ্ক।
বিএনপি ঘোষিত ২৩৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ৮১ জন এবারই প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
১৫১ জন আগে কোনো না কোনো নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। তবে এবার প্রাথমিক তালিকায় নেই বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট বা গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে বিএনপির নয়াপল্টনের কার্যালয় পাহারা দিয়ে রাখা দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও প্রার্থী তালিকা নেই—যা অনেককেই বিস্মিত করেছে।
এবার বাদ পড়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও রফিকুল ইসলাম মিয়া।
ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের ছেলেকে অবশ্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, রফিকুল ইসলাম মিয়াকে বাদ দেওয়া হয়েছে শারীরিক অসুস্থতার কারণে।
তবে আওয়ামী লীগের আমলে নির্যাতিত এবং দলের ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলও এবার মনোনয়ন পাননি। বাদ পড়েছেন সদ্য মনোনীত যুগ্ম মহাসচিব ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবীরও।
এছাড়া দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে আব্দুস সালাম, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আসলাম চৌধুরী, আমিনুর রশীদ ইয়াসিন এবং ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও আসাদুজ্জামান রিপনের নামও নেই প্রার্থীর তালিকায়।
এখানে বিএনপির অঙ্কটা পরিষ্কার নয়। তবে অনেকে মনে করছেন, যে ৬৩টি আসন ফাঁকা আছে, তার অনেকগুলো আসনে হয়তো এই নেতারা মনোনয়ন পাবেন। আবার যদি সংসদে উচ্চকক্ষ হয়, তাহলে সেখানে মনোনয়নের জন্যও তাদেরকে প্রাথমিক তালিকার বাইরে রাখা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে শেষ পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচন কিংবা উচ্চকক্ষ-কোথাও জায়গা না হলেও দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের কেউ কেউ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী কিংবা সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রধানের দায়িত্ব পেতে পারেন—এমন গুঞ্জনও রয়েছে।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণার সময়ই দলের মহাসচিব বলেছিলেন, এটিই চূড়ান্ত নয়। যেকোনো সময় পরিবর্তন আসতে পারে।
ঠিক তাই হলো। ২৪ ঘণ্টা না যেতেই বাদ পড়েছেন মাদারীপুর-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া কামাল জামান মোল্লা। দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অনিবার্য কারণে ওই আসনে তার প্রার্থিতা স্থগিত করা হয়েছে।
এমনকি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতেও নির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। তবে সামাজিক মাধ্যমে ঘুরছে কামাল মোল্লার নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের খবর।
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ অনেক নেতা ও মন্ত্রীর সঙ্গে কামাল মোল্লার ঘনিষ্ঠতার কিছু ছবি ভাসছে ফেইসবুকে। এসব কারণেই তিনি বাদ পড়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রশ্ন আসতে পারে হঠাৎ কেন প্রার্থী ঘোষণা করা হলো? ফেব্রুয়ারিতে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে কি না—এ নিয়ে যখন জনমনে সংশয়ের অন্ত নেই; যখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আগে গণভোট নাকি জাতীয় নির্বাচন, এই নিয়ে তর্ক এবং যে তর্কের অবসানে অন্তর্বর্তী সরকার বল ঠেলে দিয়েছে রাজনীতিবিদদের কোর্টে—ঠিক সেই সময়ে হঠাৎ করে ২৩৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়নের রাজনীতিটা কী?
যদিও একটু খোঁজখবর যারা রাখেন, তাদের অজানা নেই, জামায়াতে ইসলামী আসলে এই বছরের শুরুতেই ৩০০ আসনের প্রায় সব কয়টিতেই কে কোন আসনে লড়বেন, তা জানিয়ে দিয়েছে। দলীয় সবুজ সংকেত পাওয়া এই প্রার্থীরা ভোটের মাঠে যথেষ্ট সক্রিয় আছেন।
তবে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন ঘোষণা না দিয়ে প্রার্থীদের সক্রিয় রাখার এমন সক্ষমতা জামায়াতেরই আছে। তাই তাদের পক্ষে গণভোটের আগে নির্বাচন নয়, এমন দাবির দ্বৈতনীতিতে খেলা সম্ভব হচ্ছে।
বিএনপির পক্ষে এমনটা সম্ভব নয়, তারা তা করতেও চায়নি। আর চায়নি বলেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে দিয়েছে।
এমন প্রকাশ্যে তালিকা ঘোষণা করে বিএনপি কি অন্তর্বর্তী সরকার, জামায়াত ও এনসিপির ওপর চাপ তৈরি করতে চাইল, যাতে কোনোভাবেই ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনটা ঝুলে না যায়?
অর্থাৎ বিএনপি নিজে নির্বাচনের ট্রেনে চড়ার মধ্য দিয়ে কি অন্য দলগুলোকেও এই প্রক্রিয়ার মধ্যে আসতে উদ্বুদ্ধ করছে বা তাদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরির চেষ্টা করছে?
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের বৈঠকের পরদিনই বিএনপি তাদের দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করলো—যেদিন দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গণভোট ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলাকে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছেন।
শোনা যাচ্ছে, সেনাবাহিনী কোনোভাবেই নির্বাচন বিলম্বিত হোক তা চায় না। অর্থাৎ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক অনৈক্য বা বিভক্তি যতই থাকুক, সেনাবাহিনী চায় প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই যাতে জাতীয় নির্বাচন হয়।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সেনাবাহিনী মাঠে আছে। তারাও এখন ব্যারাকে ফিরতে চায়—এমনটাও শোনা যায়। সেইসঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নাজুক—এমন অভিযোগ তুলে ব্যবসায়ীরাও দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে।
তারা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে বিনিয়োগ আটকে আছে। উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক বড় প্রতিষ্ঠানও হুমকিতে পড়েছে।
ফলে তারা মনে করেন, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যত দ্রুত একটি নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নেবে, দেশের অর্থনীতির জন্য ততই মঙ্গল।
তাছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য আছে এবং ভূরাজনৈতিক নানা স্বার্থে বাংলাদেশের সঙ্গে যেসব দেশের সুসম্পর্ক রয়েছে, সেসব দেশের পক্ষ থেকেও দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ আছে বলে শোনা যায়।
সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই কি তাহলে বিএনপি তাদের প্রার্থী ঘোষণার মধ্য দিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করল?
তবে প্রার্থীদের মনোনয়নই শেষ কথা নয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে রাজনীতির হাওয়া বদল হবে।
সব দল তাদের প্রার্থী ঘোষণার পরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বঞ্চিতদের বিক্ষোভ ইত্যাদি যেমন বাড়বে, তেমনি প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে সংঘাতও শুরু হতে পারে।
অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে কী ভূমিকা পালন করবে, তাতেও হয়তো ভোটের অনেক অঙ্ক নির্ভর করবে।
সুতরাং, প্রার্থী ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিএনপি নির্বাচনের ট্রেনের যে যাত্রা শুরু করল, সেই ট্রেনটি কত দ্রুত সময়ে এবং কতটা নির্ঝঞ্ঝাটে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে, সেটি নির্ভর করছে রাজনৈতিক দল এবং সরকারের সক্ষমতার ওপর।

সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৩৬টি আসনে দলীয় প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করছে বিএনপি। এর মধ্যে নেতিবাচক তথ্য পাওয়ায় মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থী স্থগিত করা হয়েছে।
বাকি ৬৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। এই আসনগুলোতে এখন চোখ প্রথম দফায় মনোনয়ন না পাওয়া দলের নেতা ও সমমনা দল এবং জোট নেতাদের। ফাঁকা রাখা এই আসনগুলো ঘিরে আছে নানা হিসাবনিকাশ।
সম্ভাব্য নির্বাচনী জোট, রাজনৈতিক সমঝোতার উপর নির্ভর করবে এসব আসনে কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন। তবে ফাঁকা আসনে বিএনপি’র দলীয় অনেকে মনোনয়ন পাবেন। বাকিগুলো থাকবে জোটসঙ্গীদের জন্য।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, দুই-একদিনের মধ্যে বিএনপি’র নির্বাচন সংক্রান্ত লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা সমমনাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
পরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক করে আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপি ঘোষিত আসনগুলোর মধ্যে কয়েকটি আসনে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা করেছেন সমমনা দলগুলোর কয়েকজন নেতা। তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ওই আসনগুলোতে প্রার্থী দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
যদিও তারা এখন আলোচনার মাধ্যমে অন্য আসনেও নির্বাচন করতে আগ্রহী বলে মিত্র দলগুলোর মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মানবজমিনকে জানিয়েছেন।
প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর গত মঙ্গল ও বুধবার সমমনাদলগুলোর নেতারা অনানুষ্ঠানিক বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন।
মির্জা ফখরুল মিত্রদলগুলোর নেতাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, তাদের জন্য আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে।
সমঝোতার মধ্যদিয়ে ওই সব আসন তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। যেসব আসনে সমমনা দলগুলো মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। এরমধ্যে বেশ কিছু আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি।
যদিও ঘোষিত কিছু কিছু আসনও পরিবর্তনের সুযোগ আছে বলেও জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। শিগগিরই জোটের প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
সমমনা দল ও বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন, জোটের তালিকা চূড়ান্ত করতে দুই-একদিনের মধ্যে তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে। প্রথম পর্যায়ে দলের লিয়াজোঁ কমিটির নেতাদের সঙ্গে মিত্রদের বৈঠক হবে।
এরপরে তারেক রহমানের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলোর বৈঠক হবে। এসব বৈঠকে জোটের প্রার্থী তালিকা ও আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটের জন্য বেশ কিছু আসন খালি রেখেছে বিএনপি।
এর মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব লক্ষ্মীপুর-৪ আসন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে নির্বাচন করতে চেয়েছেন।
ওই আসনে বিএনপি এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬, বিজেপি’র চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থর জন্য ঢাকা-১৭, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের জন্য পটুয়াখালী-৩, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের জন্য ঝিনাইদহ-২, সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসানের জন্য ঠাকুরগাঁও-২ আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রার্থী ঘোষণার পর বিএনপি’র সঙ্গে এখনো কোনো কথা হয়নি। তবে আমি বগুড়া-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে চাই। আর বিএনপি’র সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে আমরা নির্বাচনে যাবো।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, বিএনপি’র সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এসব ঠিক হবে।
১২ দলীয় জোটের ৩টি আসন খালি রাখা হয়েছে। এই তিনটি আসনে গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে প্রচারণাও চালাচ্ছেন তারা।
এরমধ্যে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের জন্য পিরোজপুর-১, বাংলাদেশ এলডিপি’র চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিমের জন্য লক্ষ্মীপুর-১, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদার জন্য কিশোরগঞ্জ-৫।
শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে আমাকে শতভাগ কনফার্ম করেছে বিএনপি। সেই অনুযায়ী আমি নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণাও চালাচ্ছি। জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে খুব অল্প সময়ে বিএনপি’র সঙ্গে তাদের বৈঠক হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক। তার জন্য চট্টগ্রাম-১৪ এবং মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদের জন্য কুমিল্লা-৭ আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে বলে বিএনপি’র দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
রেদোয়ান আহমেদ বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আমাদের ৫টি আসন ছাড় দিয়েছিল। এবার তো আমাদের প্রত্যাশা আরও বেশি। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি বলতে পারবো।
এ ছাড়া এনডিএম-এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের জন্য ঢাকা-১৩, এনপিপি’র চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের জন্য নড়াইল-২ এবং ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপি’র সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। এসব আসনেও কাউকে মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি।
মোস্তাফিজুর রহমান ইরান মানবজমিনকে বলেন, ঝালকাঠি-১ আসন থেকে নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচনী এলাকায় আমি প্রচারণাও চালাচ্ছি। বিএনপি’র দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও তিনি সাক্ষাৎ করছেন বলে জানিয়েছেন।
ওদিকে ঢাকায় ১৫টি আসনের মধ্যে ৯টিতে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি। ৬টি আসন ফাঁকা রেখেছে। এরমধ্যে ঢাকা-৮ আসন থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। তবে বিএনপি সেখানে প্রার্থী করেছে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে।
অন্যদিকে ঢাকা-৬ আসনে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। কিন্তু ঢাকা-৬ আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী করেছেন দলের চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক পরামর্শ সহায়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে।
সাইফুল হক মানবজমিনকে বলেন, আমি ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এখন ঢাকা-১২ আসন হলেও দলীয়ভাবে সম্মত হতে পারি।
সুব্রত চৌধুরী বলেন, বিএনপি’র সঙ্গে এ বিষয়ে এখনো আমাদের কোনো কথা হয়নি। আলোচনা করে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।
এ ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলীয় সদস্য ফরম পূরণ করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে দিয়ে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপি তাকে প্রার্থী করতে পারে এমন গুঞ্জনও রাজনীতির অঙ্গনে রয়েছে।
অন্যদিকে নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা জোটের ইসলামী দলগুলোর ১২ নেতা প্রার্থী হতে পারেন। এরমধ্যে ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রিন সিগন্যালও দেয়া হয়েছে। ওদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সঙ্গে বিএনপি’র আসন সমঝোতা নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও জাতীয় নাগরিক পার্টি এককভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এর বাইরে বাম ঘরানার ৬ দলীয় জোটের সঙ্গেও আলোচনা করছে বিএনপি।
সমমনাদের কতো আসন ছাড়বে বিএনপি তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে শরিকদের ৫৮ আসনে ছাড় দিয়েছিল বিএনপি। এরমধ্যে ২২টি আসন দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামীকে। কিন্তু এবার নির্বাচনে জামায়াতকে বিএনপি’র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সমমনাদলগুলোর ২০ থেকে ২৫টি আসনে মনোনয়ন পাওয়ার মতো প্রার্থী রয়েছে বলে মনে করছেন বিএনপি’র নেতারা।

বিএনপির জন্য অত্যন্ত সুসময় ছিল ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। সেই সময়ে দলে ছিল অনেক নেতার ভিড়। কিন্তু ২০০৭ সালে এক-এগারোর সরকার ক্ষমতায় আসার পর দলটির অবস্থা আস্তে আস্তে খারাপের দিকে যায়। এর পর থেকেই দলটির প্রভাবশালী কিছু নেতা বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এই নেতারা ‘সংস্কারপন্থি’ বলে পরিচিতি লাভ করেন।
এরপর শেখ হাসিনার ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী হলে বিএনপির জন্য আরও কঠিন দুঃসময় আসে। ঠিক সেই সময়ে, বিশেষ করে শেখ হাসিনার শাসনের শেষ ১০ বছরে দলটির প্রভাবশালী অনেক নেতা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন।
তাদের কেউ কেউ স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে নির্বাসনে যান; আবার কেউবা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে গোপনে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে হাত মেলান। এদের বাইরে কেউ কেউ শেখ হাসিনার সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে টিকে থাকার চেষ্টাও করেন। কেউবা আবার নতুন দল গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে এক নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, দেশে নেই শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা।
এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির দুঃসময়ে দল ছেড়ে বিদেশে চলে যাওয়া নেতারা দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি দেশে অবস্থান করা নেতারা চেষ্টা করছেন দলে ফিরতে। এসব নেতা কে কোথায় আছেন, তা নিয়ে জনমনে কৌতূহল রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দল ছেড়ে যাওয়া এই নেতাদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে পুনর্বাসিত হয়েছেন। আবার অনেকে দেশে ফিরে এলেও এখনো দলে কোনো পদ পাননি। তবে এসব নেতা বিএনপিতে ফেরার জন্য ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মির্জা আব্বাস এ প্রসঙ্গে খবরের কাগজকে বলেন, ‘দলের অনেক বহিষ্কৃত ও পদত্যাগ করা নেতা গণসংযোগ করছেন। কিন্তু তাদের দলে ফেরানোর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না আমার জানা নেই।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপির হাইকমান্ড তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত দেয়, আমরা তা বাস্তবায়ন করি।’
বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক নেতা-কর্মী বলছেন, দলের কঠিন সময়ে বিত্তশালী ও প্রভাবশালী নেতাদের যখন প্রয়োজন ছিল, তখনই তারা দল থেকে পদত্যাগ করেন। আর এখন সুসময়ে তারা দলে ফিরছেন, পদ-পদবি পাওয়ারও চেষ্টা করছেন- এমন রাজনীতির চর্চা ভালো নয়। কারণ স্পষ্টতই দলের প্রতি তাদের কমিটমেন্টের অভাব রয়েছে।
বিএনপির একসময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা ছিলেন মোসাদ্দেক আলী ফালু। তিনি দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছাড়াও ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব। বিএনপির ডাকসাইটে একজন ব্যবসায়ী ও খালেদা জিয়ার অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন মোসাদ্দেক আলী।
কেউ কেউ বলছেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে সালাহউদ্দিন আহমদের নাম থাকা এবং নিজের নাম ভাইস চেয়ারম্যান পদে দেখে ক্ষোভ ও অভিমানে দল থেকে পদত্যাগ করেন ফালু। তার পদত্যাগপত্র বিএনপি গ্রহণও করেনি আবার ফেরতও পাঠায়নি। ২০১৭ সালে তিনি দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমান। সাত বছর পর ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট বিদেশ থেকে দেশে ফেরেন তিনি।
ফিরেই তিনি বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি মামলা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন। তবে দলে ফিরে আসার আনুষ্ঠানিক কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অনেকের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম ঠিক রাখা এবং কিছুটা নির্বিঘ্নে থাকার জন্যই বিএনপি থেকে দূরে ছিলেন মোসাদ্দেক আলী। এখন আবারও বিএনপিতে ফেরার চেষ্টা করছেন। ফালু খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও ঠিক আগের মতো আর জায়গা পাচ্ছেন না বলে বিএনপিতে আলোচনা আছে। তবে সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা এখনো ফালুকে বিএনপির লোক হিসেবেই জানেন। সদালাপী এবং ভালো আচার-ব্যবহারের জন্য ফালুর সুনাম রয়েছে।
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর দল থেকে পদত্যাগ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জিয়া পরিবারের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক একসময়ের ডাকসাইটে ব্যবসায়ী নেতা এম. মোরশেদ খান। তিনি প্যাসিফিক গ্রুপের চেয়ারম্যান। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এবং ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। জানা যায়, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাকে মনোনয়নবঞ্চিত করা হয়।
পরবর্তী সময়ে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রাম কমিটিতে তার অনুসারীদের পদ না দেওয়ায় অভিমানে রাজনীতি থেকে তিনি অবসর নেন। বর্তমানে মোরশেদ খান ও তার পরিবার সিঙ্গাপুরে বসবাস করছেন। সেখানেই তার ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে।
নেতা-কর্মীরা বলছেন, ব্যক্তিগত কারণ দেখালেও মোরশেদ খান মূলত তার ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য শেখ হাসিনা সরকারের রোষানল থেকে বাঁচতে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। অবশ্য বয়সের ভারে ন্যুব্জ এবং এখন অনেকটাই অসুস্থ বিএনপির সাবেক এই নেতা।
ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম) বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের মধ্যে একজন এবং শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন বাকেরগঞ্জ-১২ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে ঝালকাঠি-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন।
খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন মেজর (অব.) ওমর। বিএনপির কঠিন দুঃসময়ে দীর্ঘ ৪৫ বছরের সম্পর্কের ইতি টেনে ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর আওয়ামী লীগে যোগ দেন শাহজাহান ওমর।
পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে তাকে ফোন করে ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুরোধ করেন বলে ওই সময়ে গণমাধ্যমে তিনি স্বীকার করেন। তবে আওয়ামী লীগে যোগদানের দিনই তাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। ওই সময় নৌকা প্রতীকের পক্ষে ‘গুনগান’ করে তিনি আলোচিত হন।
প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকেই ঝালকাঠি-১ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেয় রাষ্ট্রপতি। সংসদ সদস্য পদ হারিয়ে তিনি একূল-ওকূল দুই কূলই হারিয়েছেন।
এরপর শাহজাহান ওমর প্রায় চার মাস পলাতক ছিলেন। গত বছরের ২১ নভেম্বর তাকে আদাবর থানায় হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে আইনশঙ্খলা বাহিনী। সেই থেকেই কারাগারে আছেন তিনি। তার ছেলে আদনান ওমর ও মেয়ে মেহজাবিন সাচ্চি। দুজনই ঢাকায় থাকেন। আদনান ওমর ব্যবসা করেন। পরিবারের সদস্যরা নিয়মিত কারাগারে গিয়ে শাহজাহান ওমরের সঙ্গে দেখা করেন। বর্তমানে কারাগারে বই পড়েই সময় কাটান শাহজাহান ওমর।
নেতা-কর্মীরা বলছেন, শাহজাহান ওমর প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে নির্বাচনি প্রচার চালিয়েছেন। তার প্রলোভনে স্থানীয় বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী দল ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। শাহজাহান ওমরের সঙ্গে তাদের কপালও পুড়েছে। মূলত ক্ষমতার লোভ ও দুর্নীতির মামলা থেকে বাঁচতে শেখ হাসিনার সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন শাহজাহান ওমর।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামের (সোনালী আঁশ) একটি দলে যোগ দেন শমসের মবিন চৌধুরী। বিএনপির সাবেক এই ভাইস চেয়ারম্যান অবশ্য তার আগ থেকেই হাসিনা সরকারের পক্ষে এবং বিএনপির বিপক্ষে তৎপর ছিলেন।
কিংস পার্টি হিসেবে পরিচিত তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। শমসের মবিন চৌধুরী বিএনপিতে যোগ দেন ২০০৭ সালে।
চারদলীয় জোট সরকার আমলে তিনি পররাষ্ট্রসচিব ছিলেন। বিএনপির সবচেয়ে কঠিন সময় ২০১৫ সালে তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেন। ওই বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপি সব পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। তিন বছর পর যোগ দেন বিকল্পধারা বাংলাদেশে।
গত সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসনে শমসের মবিন চৌধুরী তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকে অংশ নিয়ে জামানত হারান। ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর পল্টন ও যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলায় শমসের মবিন চৌধুরীকে আটক করা হয়। গত ২৪ মার্চ তিনি জামিনে কারামুক্ত হন। বর্তমানে রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ অবসরে আছেন বলে জানিয়েছেন শমসের মবিন চৌধুরী।
খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘বাসায় পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। খুব একটা বাইরে যাওয়া হয় না। রাজনীতি নিয়ে আপাতত কথা বলতে চাচ্ছি না।’
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীর প্রতীক) ২০০৮ সালে কল্যাণ পার্টি গঠনের পর থেকেই বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জোটের মিত্র হিসেবে তাকে চট্টগ্রাম-৫ আসনটি ছেড়ে দিয়েছিল বিএনপি।
বিতর্কিত সেই নির্বাচনে তিনি হেরে যান। বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘ ১৬ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর চারদলীয় ‘যুক্তফ্রন্ট’ নামে এক জোট গঠন করেন। পরে সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন মুহাম্মদ ইরবাহিম।
কক্সবাজার-১ আসনে হাতঘড়ি মার্কায় জয়লাভের নেপথ্যে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যাপক ভূমিকা ছিল বলে রাজনীতিতে আলোচনা আছে। ভোটে অংশ নেওয়ায় সেই সময় থেকেই বিএনপি ও ১২-দলীয় জোট নেতাদের সমালোচনার মুখে পড়েন এই রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগের পতনের পর তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান। এর পর থেকেই রাজনীতির আড়ালে চলে গিয়ে নীরবে দিন কাটান ইবরাহিম। বর্তমানে তিনি বাড়িতেই থাকছেন।
রাজনৈতিক পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে, নামাজ পড়ে ও কোরআন তিলাওয়াত করেই দিন পার করেন। সম্প্রতি তাকে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে দূতাবাসের একটি অনুষ্ঠানে দেখা যায়। রাজনীতিতে আলোচনা আছে, শুধু এমপি হওয়ার জন্য ও বড় টাকার লোভে পড়ে তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেছিলেন।
আলাপকালে সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী ও ইসলামের জন্য গত ১৭ বছর লড়াই করেছি, এতদূর এসেছি। ৫ আগস্টের পর এখন সবকিছু ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি সুন্দর নির্বাচন হোক। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অটুট থাকুক। সবাইকে নিয়ে দেশ এগিয়ে যাক- এখন এটাই চাই।’
‘বিএনপির পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা হয়। পার্টির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। তবে জোটের হয়ে নাকি এককভাবে তা বলার সময় এখনো আসেনি। ৪০-৫০ জনের প্রার্থীদের একটি তালিকা তৈরি করেছি’ যোগ করেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন বিএনপির একসময়ের প্রভাবশালী নেতা সাবেক এমপি আলী আসগর লবী। চাপে পড়ে তিনি ২০১৯ সালে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। কয়েক বছর ছিলেন বিদেশে।
কিন্তু শেখ হাসিনার পতনের পর দেশে ফেরেন। খুলনা-৫ আসনে তিনি বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে তার মনোনয়ন পাওয়ায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
বিশেষ করে বিগত সাড়ে ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের নির্যাতন ও জুলুম সহ্য করে যারা বিএনপির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন তারা এখন ক্ষুব্ধ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়। অনেকে বলছেন, বিএনপিতে আগে মধু ছিল না, তাই পদত্যাগ করেছিলেন। মধুর লোভে আবার দলে এসেছেন।
রাজনীতিতে ফেরা ও পদত্যাগের বিষয়ে আলী আজগর লবীর কাছে জানতে চাইলে তিনি শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
পদত্যাগ করার চার বছর পর আবারও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন দলটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহা। চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি তাকে আহ্বায়ক করে মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি গঠিত হয়। তিনি মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন। তার ফিরে আসার ঘটনায় কেন্দ্রীয় বিএনপির পাশাপাশি তৃণমূলের অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মী ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের চাপে পড়ে ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারিতে বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিএনপির সব পদ থেকে পদত্যাগ করেন একমি গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সিনহা। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
সিনহার অনুসারী নেতাদের দাবি, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি রাজনীতি ছাড়েন। চিকিৎসার কারণে দীর্ঘদিন বিদেশ ছিলেন। তার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। এখন নিয়মিত কিডনি ডায়ালাইসিস করতে হয়। রাজনীতিতে সশরীরে সক্রিয় না থেকে এলাকায় মানুষের খোঁজখবর রাখছেন নিয়মিত।
এ বিষয়ে মিজানুর রহমান সিনহাকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করলেও রিসিভ করেননি। তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মেসেজ দিলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি দিয়ে পথচলা শুরু করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের আগে বিএনপিতে যোগদান করেন এবং মেয়র নির্বাচিত হন। তখন তাকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ দেওয়া হয়।
এরপর ২০১৫ সালে মেয়র নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগে নির্বাচন বর্জন করেন তিনি। একই সঙ্গে রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।
কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই ২০১৬ সালে মনজুর আলম আবারও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি মনজুর আলম স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনি পারিবারিক ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, মনজুর আলমের রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা ছিল নাটক। তার উদ্দেশ্য ছিল আবার মেয়র হওয়া। অনেকে বলছেন, মনজুর আলম সামাজিক-ধর্মীয় ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে সময় পার করছেন।
সাবেক মেয়র মনজুর আলম বলেন, ‘বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আছি। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে পুরোনো রাজনৈতিক বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছি। শরীর আগের মতো নেই।’
বিএনপি থেকে বেরিয়ে কিংস পার্টি বলে পরিচিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) নামে নতুন দল গঠন করে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন সাবেক দুই এমপি শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর ও আব্দুর রহমান।
আবু জাফর জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে যোগদান করেন ২০০৩ সালে এবং আব্দুর রহমান ১৯৯৬ সালে। ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর বিএনপি ছেড়ে দুজনই বিএনএমে যোগ দেন। তবে সংসদ নির্বাচনে প্রত্যেকেই জামানত হারিয়েছেন। বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না আবু জাফর।
বিএনএম চেয়ারম্যান শাহ আবু জাফর বলেন, ‘বিএনএম এখন আর সচল নেই। বর্তমানে বাসায় থাকি। নির্বাচনের পর ভুল স্বীকার করেছিলাম। কিন্তু বিএনপির কেউ সাড়া দেয়নি। ওপরের কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই। তবে নিচের সারির অনেকই ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেন।’
২০২১ সালের ২৯ জুন স্বাস্থ্যগত কারণে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) মো. শাহজাহান মিয়া। তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায়। পদত্যাগের পর এলাকায় তেমন একটা যান না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বিএনপির সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক মহিউদ্দিন খান মোহন দল থেকে পদত্যাগ করেন ২০১৬ সালের ১২ আগস্ট। তিনি ২০০১-০৬ পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেস সচিব ছিলেন।
বিএনপির সঙ্গে প্রায় ৩৮ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এরপর তাকে রাজনীতিতে তেমন একটা দেখা যায়নি। নিজ জেলা মুন্সীগঞ্জেও তার তেমন কোনো যাতায়াত নেই। তবে শেখ হাসিনার পতনের পর তাকে বিভিন্ন টিভি টকশোতে দেখা গেছে। এ ছাড়া লেখালেখি করে সময় কাটাচ্ছেন।
মহিউদ্দিন খান মোহন বলেন, ‘যেহেতু বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘ সময় ছিলাম, সেহেতু সবার সঙ্গে যোগাযোগ আছে। তবে বিএনপিতে ফেরার কোনো ইচ্ছা নেই। শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বগুণ দেখেই বিএনপিতে যোগদান করেছিলাম। বর্তমানে নিজেকে রাজনীতিতে অযোগ্য মনে হয়। কারণ টাকা ও নিজস্ব বাহিনী লাগে, এর কোনোটাই আমার নেই।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ‘ডামি’ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে অংশ নিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান (সুখন)। তিনি একজন ব্যবসায়ী। নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর বিএনপি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিলেও পরাজিত হন একরামুজ্জামান।
ডামি নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ২০২৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। অনেকে তাকে সাত মাসের এমপি বলেও অভিহিত করেন। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। নাশকতা, বিস্ফোরকসহ একাধিক মামলার আসামিও তিনি।
আওয়ামী লীগের প্রলোভনে পড়ে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার এবং কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান। কিন্তু তাদের কেউই সংসদ সদস্য হতে পারেননি, উল্টো জামানত হারিয়েছেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ২০২২ সালে তৈমূর আলমকে ও ২০২০ সালে আখতারুজ্জামানকে বহিষ্কার করে বিএনপি।
বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়া-৪ আসনে দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য জিয়াউল হক মোল্লা ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের আমলে বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব প্রয়াত আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে দলে সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার হন জিয়াউল হক মোল্লা।
এরপর বিএনপিতে তিনি ‘সংস্কারপন্থি’ হিসেবে পরিচিতি পান। পরবর্তী সময়ে তাকে দলের বিভিন্ন পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন না দেওয়ার পাশাপাশি বহিষ্কার করে বিএনপি।
জিয়াউল হক মোল্লা বলেন, ‘প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়। যেহেতু এমপি ছিলাম, সেহেতু এলাকার মানুষের কাছে চাহিদা আছে। তবে এবার আমিও আগ্রহ দেখাইনি। দলও আমাকে ডাকেনি।’ তিনি জানান, বহিষ্কৃত হওয়ার কোনো চিঠি তিনি পাননি।
নানা চাপ ও প্রলোভন সত্ত্বেও বিগত সময়ে যারা দল ছেড়ে যাননি, শেখ হাসিনা-নিয়ন্ত্রিত ডামি নির্বাচনে যারা অংশ নেননি, মনোনয়নের ক্ষেত্রে তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন খুলনার নজরুল ইসলাম মঞ্জু, মিজানুর রহমান সিনহা, আলী আসগর লবীসহ অনেকে।
২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নিলে হয়তো সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম, শাহজাহান ওমর, শমসের মবিন চৌধুরী, তৈমূর আলম খন্দকার, জিয়াউল হক মোল্লা, মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানকে মনোনয়নের জন্য বিবেচনা হয়তো করত বিএনপি।

Posted ১১:৪৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta